ছাইয়েদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি: তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং সুপেয় পানির চাহিদা পূরনে রাজধানীর সব পুকুর, লেক, জলাধার, দখল-দূষণ মুক্ত করার দাবিতে গণ-গোসল উৎসব পালিত হয়েছে। আয়েজনে ছিল, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, সন্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, এলআরবি ফাউন্ডেশন, অরুণোদয়ের তরুণ দল, এসইএল চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন, স্বপ্নের সিড়িঁ সমাজ কল্যাণ সংস্থা, YSSE, YCB, SAYRID।
শনিবার দুপুরে সন্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ইবনুল সাঈদ রানার সভাপতিত্বে রাজধানীর হাতিরঝিলের মধুবাজার পয়েন্টে ব্যতিক্রমধর্মী গণ-গোসল উৎসব আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
গণ-গোসল উৎসবে বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার যুগ্ন সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, এলআরবি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সুলতানা রিজিয়া, অরুণোদয়ের তরুণ দলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবু, সন্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম সোভন, স্বপ্নের সিড়িঁ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উম্মে সালমা, YSSE এর প্রধান নির্বাহী শেখ মো. ইউসুফ হোসেন, SAYRID এর প্রধান নির্বাহী জুয়েল রানা ও আবাসন নিউজের স্টাফ রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, তিন দশক আগেও রাজধানী ঢাকা ছিল দৃষ্টিনন্দন পুকুর, খাল ও ঝিলের শহর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং ভরাট ও দখলের কারণে এসবের অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। রাজধানী হয়ে উঠেছে ইট-পাথরের শহর। প্রাকৃতিক এসব পানির আধার না থাকা, তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ বিশুদ্ধ পানির সংকট ও পরিবেশ বিপর্যয় এখন নগরীর নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে রাজধানীতে দুই হাজার পুকুর ছিল। শুধু পুকুর নয়, প্রায় ৪৪টি স্রোতস্বিনী খাল ছিল। সচেতনতা ও পরিবেশবান্ধব চিন্তার অভাবে নগরীর পুকুর, ঝিল ও খাল হারিয়ে গেছে। নগর উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে এগুলো হারিয়ে গেছে। যে অল্প সংখ্যক পুকুর রয়েছে, সেগুলোও অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, রাজধানীর জনসংখ্যা এখন প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ৪৩ হাজার ৫০০ জন। এই জনসংখ্যার সাথে প্রতিদিন গড়ে যুক্ত হচ্ছে ১৭০০ মানুষ। এত অধিক সংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলান করার ক্ষেত্রে যথাযথ কোনো পরিকল্পনাও নেই। এর ফায়দা নিচ্ছে অবৈধ দখলকারীরা। পুকুর ও খাল দখল থেকে শুরু করে খোলা মাঠ ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলছে। এর ফলে সেবা ব্যবস্থা, পয়নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যে দুই হাজার পুকুর ছিল সেগুলোর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৯০০টি কোথায় গেল, ৪৪টি খালের সিংহভাগ কেন হারিয়ে গেল? বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গোচরেই এসব খাল, পুকুর ও ঝিল দখল হয়েছে। যদি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুলো সংরক্ষণ করা যেত, তবে রাজধানীর এই করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এখন বিশুদ্ধ পানির যে সংকট, বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণ এগুলোর মূল কারণই তো হচ্ছে প্রাকৃতিক পানির আধারগুলো ভরাট করে ফেলা।
বলা হচ্ছে, রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর নিচে নেমে যাচ্ছে। চারদিকের চারটি নদী দখল-দূষণে প্রবাহ হারিয়ে ফেলায় রাজধানী শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে। যতই দিন যাবে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোনো উপায়ই থাকবে না। রাজধানীকে কিছুটা হলেও বসবাস উপযোগী করে তুলতে যে কয়টি পুকুর, ঝিল ও খাল রয়েছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। যারাই অবৈধভাবে দখল করে আছে, যে কোনো উপায়ে তাদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে হবে। পুকুর, খাল ও ঝিল রক্ষা এবং উদ্ধার করার দায়িত্ব যেসব প্রতিষ্ঠানের, তাদের এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। রাজধানীকে বসবাস উপযোগী করে তুলতে এবং আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হওয়া রুখতে তাদের উদ্যোগী হতে হবে।
গণ-গোসল উৎসবে বক্তারা হাতির ঝিল প্রকল্পের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি পুকুর, খাল ও ঝিল রক্ষায় আরো কঠোর উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই